দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে। এটি চালু হলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না ই-পাসপোর্টধারীদের। মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যেই দেশ-বিদেশের ই-গেট দিয়ে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে পারবেন ই-পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি নাগরিকরা। আগামী ২২ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করবেন। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় পাসপোর্ট, ভিসা অফিস আগারগাঁও, পাসপোর্ট অফিস উত্তরা থেকে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে এবং বাংলাদেশের ৮০টি বৈদেশিক মিশনে এর কার্যক্রম চালু করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গতকাল রোববার ‘ই-পাসপোর্ট ভবন ও ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম উদ্বোধন-সংক্রান্ত’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট পাবেন। রোববার ই-পাসপোর্টের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফটোগ্রাফ নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন জানান, অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদফতর (ডিপিআই) কর্তৃপক্ষ বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে তার ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করে। প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্টের জন্য ডিজিটাল স্বাক্ষরও দেন। এ সময় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সবাই এ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ই-পাসপোর্ট হবে ৪৮ ও ৬৪ পাতার। আর মেয়াদ হবে পাঁচ ও ১০ বছর। ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টের (১৫ দিনের মধ্যে দেয়া হবে) জন্য ফি লাগবে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর সাতদিনের মধ্যে (জরুরি) পেতে হলে ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও দু’দিনে (অতি জরুরি) পাওয়ার জন্য লাগবে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। একই সংখ্যক পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ই-পাসপোর্টের জন্য পাঁচ হাজার, জরুরি সাত হাজার ও অতি জরুরির জন্য নয় হাজার টাকা হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

আর ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে লাগবে যথাক্রমে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি সাত হাজার ৫০০ টাকা ও অতি জরুরি ১০ হাজার ৫০০ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে লাগবে যথাক্রমে সাত হাজার (সাধারণ), নয় হাজার (জরুরি) ও ১২ হাজার (অতি জরুরি) টাকা। ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবির প্রয়োজন হবে না, কাগজপত্র সত্যায়নও করতে হবে না।

ই-পাসপোর্ট চালুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের ১১৯তম দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে নানা জটিলতায় কয়েক দফা পেছানো হয় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরুর তারিখ। বাংলাদেশে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি প্রবর্তনের পর এক দশকও পার হয়নি। কিন্তু এমআরপির ডাটাবেজে ১০ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক পাসপোর্ট করার ঘটনা দেখা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এবং একজনের নামে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা বন্ধ করতে ই-পাসপোর্ট চালু করতে উদ্যোগী হয় সরকার। ২০১৮ সালের ২১ জুন প্রকল্পটি একনেকের সায় পায়। ওই বছরের জুলাইয়ে জার্মান কোম্পানি ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি করে পাসপোর্ট ও বহির্গমন অধিদফতর। সোয়া তিন হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশকে ই-পাসপোর্ট ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করছে তারা। এতে স্মার্ট কার্ড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ও অ্যান্টেনা বসানো থাকে। এ পাসপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাসপোর্টের ডাটা পেজ এবং চিপে সংরক্ষিত থাকে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন
প্রযুক্তি সারাদিন